দেশের উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদের বিস্তৃর্ণ চর এলাকার পতীত জমিতে প্রথম বারেরমত সূর্যমুখী চাষ করে নতুন সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। এতে একদিকে যেমন কর্মসংস্তানের ব্যবস্থা হবে, আয় বাড়বে, অন্যদিকে অনাবাদি পতীত জমিকে কাজে লাগিয়ে লাভবান হবেন তারা। এছাড়াও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণ করবে কৃষকদের এই সূর্যমুখী চাষ।
মঙ্গলবার কুড়িগ্রাম জেলার রাজীবপুর উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়নের চর সাজাই মন্ডলপাড়া এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, স্নীগ্ধরোধ এবং ঝিরিঝিরি বাতাসে দুলছে দিগন্তজোড়া মাঠভরা সূর্যমুখী ফুল। এমন দৃশ্য চরাঞ্চলের মানুষ আগে কখনো দেখে নি। তাই বিকেল হলেই ফুল দেখতে অনেকেই ভির জমায় সূর্যমুখীর জমিগুলোতে। সুর্যমুখী ফুল অনেকেই মনে করে এটি শুধু ফুলই। আসলে ঠিক তা নয়, এই ফুল একটি অর্থকরী ফসল। পুষ্টিগুন সম্পন্ন ভোজ্য তেলের কাঁচামাল। ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি সূর্যমুখী সৌন্দর্য বাড়াচ্ছে চরাঞ্চলের। এতে নতুন স্বপ্ন বুনছেন সূর্যমুখী চাষীরা।
এ বছর এই প্রথম বারেরমত কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলের পতীত জমিতে পাইলট প্রকল্প হিসেবে ৩০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষের জন্য কৃষি প্রনোদনা দিয়েছে রাজিবপুর কৃষি অফিস। সেই বীজ নিয়েই সূর্যমূখী চাষ করেছেন কৃষকরা। কিছুদিন পর ফুল কাটা শুরু করবেন চাষীরা। সূর্যমুখী স্বল্প মেয়াদী ফসল। খরচ ও পরিশ্রমের তুলনায় উৎপাদন ভালো। তাই এই ফুল চাষে আগ্রহ বাড়ছে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে।
এ বিষয়ে চর সাজাই দাখিল মাদ্রসার শিক্ষক আমিনুর রহমান (সূর্যমুখী চাষী) জানান, “চরের পতীত জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছি। মোটামুটি ভালোই দেখা যাচ্ছে। রাজীবপুর কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতায় সূর্যমুখী সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। তাই আমি ১ একর জমি আবাদ করেছি। আশা করছি ভালো একটা লাভ পাবো। এ এলাকায় এটা প্রচলিত ফসল না, আমার ফসল দেখে সবাই আগ্রহী হবে। তাই আমি প্রথমেই শুরু করেছি, কৃষক ভাইয়েরা সবাই যাতে আগ্রহী হয়।”
সূর্যমুখী চাষীদের অনুপ্রেরণা ও পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। আগামী বছর আবাদ বাড়াতে তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছেন রাজিবপুর কৃষি কর্মকতার্। চলতি বছর ৩০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে রাজীবপুরের বিভিন্ন চরাঞ্চলে। আগামীতে দ্বিগুণ অথবা তারও বেশি চাষ হবে বলে আশা করছেন তারা।
স্থানীয় কৃষক এরশাদ আলী, আব্দুল মালেকসহ বেশ কয়েকজন জানিয়েছেন, “সূর্যমুখী এর আগে এই অঞ্চলে কেউ আবাদ করে নাই। অন্যান্য ফসলে যে পরিমাণ সার, কিটনাশক, পানি দেয়া হয় এ ফসলে তার অর্ধেক। আবার ফলন মনে হয় ভালো হবে। আমরাও সামনে বছর আবাদ করবো।”
রাজীবপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রতন মিয়া জানান, “রাজীবপুর উপজেলায় এ বছর আমরা কৃষি প্রণোদনার আওতায় ৩০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করিয়েছি। সূর্যমুখী সম্পর্কে অকেকেই মনে করে ফুলের জন্য চাষ করা হয়। এটি একটি তেল জাতীয় পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ফসল। আমাদের রাজীবপুর উপজেলার চরাঞ্চলের জন্য সূর্যমুখী চাষ ব্যাপক সম্ভাবনাময় ফসল। আমরা তাদের সাথে আছি, প্রতিনিয়ত কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। আগামীতে দ্বিগুণ বা তারও বেশি চাষ হবে বলে আমি মনে করি।