বিদ্যমান সংকট উত্তরণে উলামাদের ঐক্যের গুরুত্ব ও সামাজিক স্থিতিশীলতা স্থাপনে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের অবস্থান কী, এই বিষয়ে দলটির মহাসচিব মাও: হাবিবুল্লাহ মিয়াজির একান্ত সাক্ষাতকার নেওয়া হয়।

উক্ত সাক্ষাৎকারে ১০ আগস্ট ২০২৪, বৃহস্পতিবার বেলা ১টার দিকে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন-এর প্রতিষ্ঠান জামিয়া নূরিয়া, কামরাঙ্গীরচর, ঢাকা-এর কার্যালয়ে দলটির মহাসচিব, আলেম সমাজ ও দেশবাসীকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বার্তা দিয়েছেন।

এ সময় উক্ত কার্যালয়ে আরো উপস্থিত ছিলেন মাও: সাইফুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন।

মহাসচিব হাবিবুল্লাহ মিয়াজিকে প্রথমেই প্রশ্ন করা হয়, ৭ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ সকল ইসলামী দল পরিহার করলেও খেলাফত আন্দোলন কেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এ বিষয়ে। জবাবে দলটির মহাসচিব বলেন প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই আমরা সকল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে আসছি। জানা যায় ৪ দফা দাবিতে দলটি নির্র্বাচনে অংশ নেয়, এ সকল দাবির অন্যতম ছিল নির্বাচনের আগে নিরাপরাধ উলামায়ে কেরামের নিঃশর্ত মুক্তি ও সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা।

উল্লেখ্য বটগাছ প্রতীকে উক্ত নির্বাচনে অংশ নিয়ে দলটি কোন আসনে বিজয়ী হতে পারে নি।

দেশ বরেণ্য আলেমে দ্বীন মাও: হাফেজ্জী হুজুর (রহি.) প্রতিষ্ঠিত দলটিকে ফ্যাসিবাদী সরকার দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য কোনরুপ চাপ প্রয়োগ করেছিল কিনা এই বিষয়ে জানতে চাইলে মহাসচিব বলেন, আমরা ¯স্বেচ্ছায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু দেশবাসীর কাছে কিছু গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মিথ্যা তথ্য প্রচার করে যে, সরকার আমাদেরকে চাপ প্রয়োগ করে নির্বাচনে এনেছে।

তিনি আরো বলেন এটি নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছিল তা এখন আর নেই।
ফ্যাসিবাদী সরকার পতনের পর কোন রাজনৈতিক দল তাদের সাথে যোগাযোগ করেছেন কিনা জানতে চাইলে মহাসচিব বলেন, এখন পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দল তাদের সাথে সাক্ষাত করেনি। তিনি বলেন, খেলাফত আন্দোলনের দরজা সকল রাজনৈতিক দলের জন্য উন্মুক্ত। বিএনপি, জামায়াত, হেফাজত, জাতীয় পার্টিসহ যে কোন রাজনৈতিক দলের সাথে আমরা সাক্ষাত করতে প্রস্তুত।

তিনি আরো বলেন খেলাফত আন্দোলন অতীতে বহু আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামীর সাথে রাজপথে অংশগ্রহণ করেছিল ইতিহাসে তার প্রমাণ আছে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুলিশের উপর জনগণের হারানো আস্থা ও পুলিশের মর্যাদা কীভাবে পুনরুদ্ধার করা যায় এ প্রসঙ্গে মহাসচিবের দৃষ্টিভঙ্গি জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, প্রয়োজনে পুলিশের পোশাক ও লগো পরিবর্তন করা যেতে পারে। যেমনটি করা হয়েছিল বিডিআর বিদ্রোহের পর বিডিআরের নাম ও পোশাক পরিবর্তন করে। তিনি আরো বলেন প্রয়োজনে ‘পুলিশ’ শব্দটিও পরিবর্তন করা যেতে পারে। তিনি বলেন, পুলিশের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা গেলে এ ঘটনা ঘটত না।

নতুন বাংলাদেশ বিনির্মানে বর্তমান অন্তর্বতী সরকারের কাছে কী প্রত্যাশা করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে বিকৃত শব্দ (রাজাকার, জঙ্গী, সন্ত্রাসী, পাকিস্তানের দালাল, মৌলবাদী, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি) শব্দ পরিহার করতে হবে। তাঁর দাদা হুজুরের কথা উল্লেখ করেন তিনি বলেন, হাফেজ্জী হুজুর (র.) বলেছিলেন, “বিদ্যুৎখাত থেকে দুর্নীতি দূর করা গেলে বিদ্যুতের তামার তারগুলো সোনার তারে পরিণত হত।” তিনি আরো বলেন দেশ থেকে সকল ধরনের দুর্নীতি দূর করা গেলে দুই (২) বছরে দেশ পাল্টে যাবে।

ড. মোহাম্মদ ইউনুসের উপর আস্থা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যদি তাঁর সরকার ধর্মীয় অনুভূতিতে কোন ধরনের আঘাত না করে তাহলে তাকে আমরা অকুন্ঠ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবো।
তিনি আরো বলেনÑ ভোটাধিকার নিশ্চিত করা না গেলে ভবিষ্যতে আবারো ফ্যাসিবাদ ফিরে আসবে। আর ফ্যাসিবাদকে কেউ সহ্য করে না। ফ্যাসিবাদকে ধ্বংসের হাত থেকে কেউ রক্ষা করতে পারে না যেমন ভারত পারেনি ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে রক্ষা করতে।
সমাজ থেকে জুলুম নিপীড়ন ও দুর্নীতি দূর করতে তিনি ‘ফাস্তাবিকুল খায়রাত’ এর উপর জোড় দেন। তিনি বলেন আমাদেরকে ভালো কাজে প্রতিযোগিতা করতে হবে। আর আলেম সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

পরিশেষে তিনি বলেন ফ্যাসিবাদী সরকার আমার বাবাকেও জেলে পুরেছিলেন। তারা শুধু জামায়াতকে হেনস্তা করেনি, মাও: মামুনুল হক, রফিকুল ইসলাম মাদানী, মুফতী আমীর হামজাসহ বহু আলেমকে হেনস্তা করেছে তাদেরকে জাতির সামনে অপদস্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। আলেম সমাজের ঐক্যের কোন বিকল্প নেই। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে আলেম সমাজের ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।