1. dailyamarkothabd@gmail.com : admin :
  2. hmhabibullah2000@gmail.com : Habib :
  3. sabbirmamun402@gmail.com : Sabbir :
বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:১৬ পূর্বাহ্ন
বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:১৬ পূর্বাহ্ন

মৃত্যুর আগে ইয়াসিন: ‘আমি তো মিছিলে যাই নাই, আমারে গুলি করল কেন’

অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

Tags:

সমগ্র বাংলাদেশ বিশ্ব ক্রিকেট খেলা বাণিজ্য হ্যালো গ্লিটজ লাইফস্টাইল টেক সব খবর

 

সমগ্র বাংলাদেশ

মৃত্যুর আগে ইয়াসিন: ‘আমি তো মিছিলে যাই নাই, আমারে গুলি করল কেন’

“ইয়াসিনের মরদেহ খুলনায় আনতে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়াও ছিল না। আমরা এখান থেকে রূপসা খেয়াঘাটে সাহায্য উঠাইয়া পাঠাইছি, তাই দিয়ে মরদেহ খুলনায় এনে দাফন করা হয়েছে

 

তরুণ ইয়াসিন শেখ কাজ করতেন ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকার একটি এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের দোকানে ডেলিভারিম্যান হিসেবে। গত ২০ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে গ্রাহকের বাসায় সিলিন্ডার পৌঁছে দিয়ে ফেরার সময় গুলিতে আহত হন তিনি।

 

গুলি পেটের মধ্যে লেগে পেছন থেকে বের হয়ে যায় তার। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঁচদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ২৫ জুলাই তার মৃত্যু হয়।

 

ইয়াসিনের গ্রামের বাড়ি খুলনার রূপসা উপজেলার রহিমনগর গ্রামে। চার ভাইবোনের সবার ছোট ইয়াসিনের তিন বোন নূরজাহান, নাসরিন ও শারমিনের বিয়ে হয়ে গেছে। এক বোনের সংসার টেকেনি। সেই বোন আর মাকে নিয়ে যাত্রাবাড়ী মাতুয়াইল এলাকায় ছোট একটি ঘরে ভাড়া থাকতো সে।

 

 

রহিমনগর গ্রামের ইয়াসিনের নানির ভাড়া বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, জীর্ণশীর্ণ পরিবেশে তাদের বসবাস। পরিবারের উপার্জনক্ষম একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা মা মনজিলা বেগম।

 

সেদিন কী হয়েছিল জানতে চাইলে ইয়াসিনের মা বলেন, “ইয়াসিন গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর কয়েকজন যুবক যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইল এলাকায় আমাদের বাসায় এসে খবরটা জানায়। তখন আমার কাছে একটা টাকাও ছিল না। এক রিকশাওয়ালার হাতে-পায়ে ধরে কোনো রকমে যাত্রাবাড়ী গিয়ে দেখি, আমার ছেলে রাস্তায় পড়ে আছে। বাঁচার আকুতি জানিয়ে তখনও কাতরাচ্ছিল সে।”

 

কথাগুলো বলতে গিয়ে ডুকরে ওঠেন মনজিলা। একমাত্র ছেলেকে হারানোর কষ্ট তখন জলের ধারা হয়ে নামছিল তার চোখে বেয়ে। সেদিন ছেলে তাকে জড়িয়ে ধরে বারবার বলছিল- “মা, আমি তো মিছিলে যাই নাই। গ্রাহকের বাড়ি গ্যাস দিয়ে ফিরে যাচ্ছিলাম, আমার গায়ে গুলি করল কেন?”

 

 

নম্র-ভদ্র স্বভাবের ইয়াসিনকে সবাই স্নেহ করত বলে এলাকার সাগর নামের এক যুবক জানালেন। তিনি বয়সে ইয়াসিনের চেয়ে বয়সে বড় হলেও তাদের সখ্যতার কমতি ছিল না। আন্দোলনে না গিয়েও গুলিতে প্রাণ হারানো ইয়াসিনের লাশ বাড়ি আনার জন্য সাহায্য পাঠাতে হয়েছিল বলে জানান তিনি।

 

সাগর বলেন, “ইয়াসিন খুলনায় আমাদের সঙ্গেই থাকত। ওর বাবা বেঁচে না থাকায় সবাই তাকে একটু বেশি ভালোবাসতো। কাজের জন্য দুই আগে ওরা ঢাকায় গেল।

 

“ওরা এতো গরিব যে, ইয়াসিনের মরদেহ খুলনায় আনতে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়াও ছিল না। আমরা এখান থেকে রূপসা খেয়াঘাটে সাহায্য উঠাইয়া পাঠাইছি, তাই দিয়ে মরদেহ খুলনায় এনে দাফন করা হয়েছে।”

 

গুলি লাগার পর ইয়াসিনকে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। সেখানে লাইফ সাপোর্টে থাকার পর তার মৃত্যু হয়। ১৪ বছর আগে ইয়াসিনের বয়স যখন দুই বছর, তার বাবা নুর ইসলাম শেখের মৃত্যু হয়েছিল ব্রেইন স্ট্রোক করে। ওইসময় তিন মেয়ে এবং দুই বছরের ছেলে ইয়াসিনকে নিয়ে মনজিলার ঠাঁই হয়েছিল রূপসা উপজেলার রহিমনগরে। বিধবা মায়ের ভাড়া করা ছোট একটি ঘরে বেড়ে ওঠে ইয়াসিন।

 

কথাগুলো বলতে বলতে আবারও চোখে কোণে জল জমাট বাঁধে মনজিলার। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলেন, আর্থিক অনটনে পড়াশোনাও হয়নি ইয়াসিনের। মানুষের বাড়ি কাজ করে তার তিন মেয়ে নুরজাহান, নাসরিন ও শারমিনকে বিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু ছোট মেয়ে শারমিনের সংসার না টেকায় দুই বছর আগে মেয়ে আর ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় চলে যান। ইয়াসিনের আয় দিয়েই ঘর ভাড়াসহ সংসার চলতো তাদের।

 

তিনি বলেন, “আমার ছেলের তো কোনো দোষ ছিল না। সে তো কোনো দল করত না। কাজ করত, ভাত খেত। এখন আমরা কী করে চলব, কে খাওয়াবে? আমার তো সব শেষ।”

 

ইয়াসিনের বোন নুরজাহান মায়ের পাশে নির্বিকার হয়ে বসে ছিলেন। বাবার পর ভাইকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান এই তরুণী বলেন, “আমি আর আমার মা একই কারখানায় কাজ করি। সেখানেই খবর পাই, ভাই গুলিবিদ্ধ হয়েছে।

 

“আমার ভাই ছোট থেকে অনেক কষ্ট করতে করতে বড় হয়েছে। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছি, এখন ভাইকে হারালাম। আমার মা আর আমাকে দেখার কেউ রইল না।”

Please Share This Post in Your Social Media

এ জাতীয় আরও খবর