কলেজ লাইফে প্রথম প্রেমিকার কাছ থেকে ৬০০ টাকা লোন করে বানিয়ে ছিলাম ‘পায়রা’ শর্টফিল্ম- জাহিদ প্রীতম
জাহিদ প্রীতম। জনপ্রিয় একজন নাটক নির্মাতা। ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ শুরু করেন ২০২০ সালে। এখন পর্যন্ত ১০ টা ওয়েব ফিকশন নির্মান করেন যা দর্শক প্রিয়তার চরম শিখরে পৌঁছে গেছে। এবার তিনি তিলোত্তমা নির্মান করে প্রশংসায় ভাসছেন। এ-সব নিয়ে কথা বলেছেন তিন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সেলিম হাসান।
‘আপনার নির্মাতা হিসেবে যাত্রা শুরু হয় কিভাবে এবং এখন নির্মাতা হিসেবে কেমন অনুভব করেন ….
জাহিদ প্রীতম : নির্মাতা হিসেবে পথ চলাটা সুন্দর অনুভব দেয়। আমি এজন্য কৃতজ্ঞতা জানাবো আমার ১৭ বছরের জিগরি দোস্ত অর্নব হাসনাতের প্রতি। দেখবেন আমার বা ভিকি জাহেদের ম্যাক্সিমাম কাজে ভিডিও এডিটর, কালার, ভিএফএক্স, সাউন্ড, মিউজিকে এই ছেলেটার নাম থাকে। সে পর্দার আড়ালে থাকা মানুষ, এই ছেলেটাই আমাকে দিয়ে তার শর্ট ফিল্মে নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করাতো ক্লাস ৯/১০ এ। আমি খুব ইনজয় করতাম ব্যাপারটা। সবাই অভিনয় দেখে ভালোই বলত। বলতো অভিনেতা হবার জন্য। অর্নব আমার গল্প লেখা পছন্দ করত, ও আমাকে বলল,‘প্রীতম তোর গল্প গুলা ইউনিক, এগুলা আগে কখনোই কেউ দেখেনাই। স্টাইলটাও আলাদা, তোর ফিল্মমেকিং করা উচিৎ। আমি ওকে বললাম আমি তো জানিনা কিছুই। বললো, তোর ভিতরেই ব্যাপারটা আছে৷ তুই ভিজ্যুয়ালাইজার। যা দেখিস, যেভাবে দেখিস ওইভাবে চিত্রনাট্য সাজায়া, ক্যামেরায় ধারন কইরা আনমু। বাকিটা আমার কাজ।
এরপর কলেজ লাইফেই প্রথম প্রেমিকার কাছ থেকে ৬০০ টাকা লোন করে বানিয়ে ফেললাম ‘পায়রা’ নামক ৫ মিনিটের একটা শর্ট ফিল্ম। যেটা বেশ কয়েকটা দেশি – বিদেশি ইভেন্টে সুনাম কুড়ানোর পাশাপাশি, পুরস্কার ও জিতে নিয়েছিল। ৬০০ টাকা খরচে বানানো শর্টফিল্ম করে আমি অর্জন করেছিলাম ১২০০০ টাকা প্রায়। আমি সেই মুহূর্ত গুলো উপভোগ করছিলাম। সেই অনুভূতি গুলোই আসলে আমাকে নির্মাতা বানিয়েছে, আর অর্নবের মত বন্ধুরা আছে বলেই সাহস পেয়ে এখনো এগিয়ে যাচ্ছি। কারণ আমার গল্প গুলো সাধারণ না। প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জ থাকে, ভিএফএক্স থাকে, এডিটের খেলা থাকে। মনস্তাত্ত্বিক সিংক না থাকলে কখনোই দর্শক ফিকশন গুলো বুঝত না।
‘আপনার উল্লেখযোগ্য কাজগুলোর কী কী…..
জাহিদ প্রীতম :
আমার জীবনের সব কাজই উল্লেখযোগ্য আমার কাছে। এবং আমার দর্শকও খুব দ্বিধায় পড়ে যান এমন প্রশ্নে। কারন এই ১০ গল্প আলাদা প্লট, জনরার হলেও তারা দর্শনগত ভাবে একে অন্যের পরিপূরক। ধরুন যে গল্পটা এখন আপনাকে ভাবাবে তার পরের ফিকশনেই আপনি ওই দর্শনের ধারাবাহিক একটা ব্যাপার খুঁজে পাবেন। গল্পগুলো কানেক্টেড। তবে আমি সবচেয়ে বেশি আলোচনা পেয়েছি মেঘে ঢাকা রোদ্দুরে, লিলুয়া, মেমোয়ার অব লাভ, নীল অপরাজিতা, বুক পকেটের গল্প ও তিলোত্তমা কাজ দিয়ে।
আর অপেক্ষার নীল প্রহর তো আমার আমার পরিচয়৷ যে গল্প বের হবার সাথে সাথে গ্রুপে গ্রুপে, ফোন কলে, ইন্ডাস্ট্রি তে হই চই পড়ে গিয়েছিল, এমন জনরার নাটক কিভাবে এই ছোটছেলেটা বানাতে পারল। ওই ব্যাপারটা ভাবলে খুব উপভোগ করি৷ আসলেই দু:সাহস দেখিয়েছিলাম গল্প বলার দিক থেকে।
‘তিলোত্তমা নাটকে কী এমন যাদু রয়েছে যা প্রতিটা দর্শককে মুগ্ধ করে….
জাহিদ প্রীতম: সততা, খুব সহজ কিছু স্বীকারোক্তি আছে যেগুলো আমরা উপন্যাস, গল্প, নাটক বা সিনেমায় দেখতে পাইনা। সব জায়গায় যে কৃত্রিমতা তৈরী করা হয়েছে, তিলোত্তমা সেই কৃত্তিমতা ভাঙার গল্প।
‘নাটক নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী….
জাহিদ প্রীতম : আমি ভবিষ্যত পরিকল্পনায় বিশ্বাসী না। আমি প্রতিদিন নতুন ভাবে শুরু করতে ভালবাসি। আমি জানি জীবন একটা পাজল গেইম। এখানে কোন কিছুই গোছানো না। তবে দিন শেষে সলভড হবেই। উত্তর মিলবেই।