আমার ফ্লাইট এর ১৫ দিন আগে থেকে শুরু হয়ে গেছে আম্মুজানের উপদেশবাণী। এটা খাও,ওটা কাও,জামা কাপড় গুছিয়ে নাও। বিশ্ববিদ্যালয় কি দেশে নাকি?কিছু রেখে গেলে আবার আয়সা নিয়ে যাবে কি করে? এভাবে নানাবিধ আদেশ,নিষেধ শুরু হয়ছে। আর মাঝে মাঝে আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আঁখি বেয়ে টপ টপ করে অশ্রু ঝরে।নিঃশব্দে কাঁদে। যখন জিজ্ঞেস করি আম্মুজান কাঁদেন কেন?তখন বলে কিছুনা আব্বু। আম্মুজানের কান্না নতুন কিছু নয়।বাড়ি থেকে মাদ্রাসাই যাওয়ার সময় আম্মুজান সবসময়ই কাঁদেন। এখন তো আরো বিদেশ। যত ফ্লাইটের সময় ঘনিয়ে আসতেছে ততই আম্মুজানের কান্না বাড়ছে।
কিন্তু একটা সময় ছিল আম্মুজান একা কাঁদতেন না। আমিও কাঁদতাম। আমার কাঁদা শুরু হতো আম্মুজানের ৩ দিন আগে থেকেই।খাওয়া দাওয়া সব বন্ধ হয়ে যেত।আম্মুজানের কোলে ঘুমাতে যেতাম,আম্মুজানের পিছে পিছে থাকতাম সবসময়। আমি আম্মুজান কে ছেড়ে যাওয়া কোন ভাবেই মেনে নিতে পারতাম না। আমি মাদ্রাসাই যাওয়ার পর ও প্রায় এক সাপ্তাহ মত কিছু করতে পারতাম না, পড়াশোনায় ও মন বসত না,শুধুই কান্না আর কান্না।আমি শুধু কান্না করতাম আর নফল নামাজ পরতাম।আম্মুজান বলেছিল কান্না আসলে নামাজ পড়তে।কিন্তু এই যাত্রা চিল ভিন্ন তাই আমার কান্না আড়ালে রাখলাম । কান্না রয়েছে হৃদয় তবু মলিন হাসি মুখে। কারণ আমি এখন বড় হয়েছি। আমার চোখের পানির দাম অনেক বেশি।কিন্তু আম্মুজান বড় হলো না।ছোটই রয়ে গেল। সারাক্ষণ ছোট বাচ্চাদের মত কাঁদে। আমি কাঁদি না।আমি বাসা আর বাহিরের মধ্যে আগের মতো তফাৎ খুঁজি না। ভার্সিটিতে নতুন বন্ধু হবে। তাই আর পরিবারের অভাব তেমন মনে পড়বে না। কিন্তু আম্মুজান? আম্মুজান কাঁদে কেন? আম্মুজান তো আর বাসাই কষ্টে থাকে না।তারপরে ও কেন কাঁদে? কারণ আম্মুজানের জন্য তো আর এমন কেউ নাই, যে ছেলের অভাব পূর্ণ করবে। বরং আম্মুজান তার একমাত্র বুকের মনিককে তার কোল থেকে বিদায় দিচ্ছে।আম্মুজান মাঝে মাঝে আমাকে বলে,
” আমি যদি পুত্র হতাম
তুই হতি আমার মা,
তাহলে বাবা বুঝতে পারতি
পুত্রের বেদনা”,,,
লেখক মো: জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান
শিক্ষার্থী আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়, কায়রো, মিশর